ঢাকা: চীনের সামরিক সমরাস্ত্র প্রদর্শনী এবং সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন পশ্চিমা দেশগুলোর সেই পুরোনো ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে, যেখানে বলা হতো চীন কেবল পশ্চিমা প্রযুক্তির নকল করে। এটি এখন ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে চীন সামরিক এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিচ্ছে, যা বহু দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অনুকূলে থাকা সামরিক ভারসাম্যকে পরিবর্তন করছে।
বেইজিংয়ে ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ‘জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধের’ ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজটি ছিল চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির এক সুস্পষ্ট প্রদর্শনী। এই কুচকাওয়াজে সাধারণত চীন তাদের অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করতে রাজি হয় না, কিন্তু এবার তারা কিছু নির্বাচিত অত্যাধুনিক সরঞ্জাম উন্মোচন করেছে।
প্রদর্শনীতে উল্লেখযোগ্য ছিল চীনের ক্রমবর্ধমান বিমানবাহী জাহাজের বহরের জন্য নির্মিত নতুন বিমানগুলো। বর্তমানে তাদের তিনটি বিমানবাহী জাহাজ থাকলেও, আগামী বছরগুলোতে একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সুপারক্যারিয়ার যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা আকারের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জেরাল্ড ফোর্ড শ্রেণির মতোই বড় ও সক্ষম। এছাড়া, কুচকাওয়াজে চার ধরনের নতুন ‘লয়াল উইংম্যান’ ড্রোন উন্মোচন করা হয়, যা পাইলটচালিত বিমানের পাশাপাশি উড়তে এবং তাঁদের নির্দেশে কাজ করতে পারে। প্রদর্শিত অন্যান্য সরঞ্জামের মধ্যে ছিল অন্তত চারটি নতুন জাহাজবিধ্বংসী ও ভূমি থেকে ভূমিতে হামলার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, একটি নতুন মনুষ্যবিহীন সাবমেরিন এবং নতুন টর্পেডো।
এই প্রদর্শনী চীনের সামরিক শিল্প খাত পর্যবেক্ষণকারীদের জন্য এক উদ্বেগের সর্বশেষ প্রকাশ। ২০২৪ সালের বড়দিনের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুটি নতুন স্টিলথ কমব্যাট বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের ছবি দেখা যায়। এছাড়া, ‘নেভাল নিউজ’-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, চীন এমন একধরনের অনন্য শক্তিচালিত বার্জ তৈরি করছে, যা অপ্রস্তুত উপকূলীয় এলাকায় মালপত্র ও ভারী সাঁজোয়া যান খালাস করতে সক্ষম। এরপর জানুয়ারিতে প্রকাশিত বাণিজ্যিক উপগ্রহের ছবি থেকে জানা যায়, বেইজিংয়ের বাইরে চীন একটি নতুন সামরিক কমান্ড সেন্টার নির্মাণ করছে, যা পেন্টাগনের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বড়।
পাকিস্তানের বিমানবাহিনী চীনের সরঞ্জাম ব্যবহার করে গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আকাশযুদ্ধে অংশ নেয় এবং সীমিত প্রমাণে দেখা যায়, সেগুলো বেশ নির্ভরযোগ্যভাবে কাজ করেছে। এসব ঘটনা একটি পূর্ণাঙ্গ দেশীয় সামরিক শিল্প খাত গড়ে তোলার চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষারই ইঙ্গিত দেয়। চীন ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে তারা এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে একটি বিশ্বমানের সামরিক বাহিনী গড়ে তুলবে। যদিও পিএলএ-এর মধ্যে গুরুতর দুর্নীতি ও কার্যকারিতার সমস্যা রয়েছে, কিন্তু প্রযুক্তিগত দিক থেকে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রমাণ অনেক আগে থেকেই ছিল। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে পিএলএ সম্ভবত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেকোনো সামরিক বাহিনীর তুলনায় সবচেয়ে দ্রুত প্রযুক্তিগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো চীনের ডিজিটাল রূপান্তরের বিষয়টি আরও জোরদার করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে কি এখনো অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে?
0 Comments
এখানে প্রকাশিত সংবাদ গুলো ইন্টারনেট, আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক এবং বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। কারো অধিকার এবং আত্মসম্মান কে ক্ষুন্ন করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।