ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারন কি?

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: এর বহুস্তরীয় কারণসমূহের একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ

রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলমান সংঘাত, যা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের সাথে নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এটি কেবল একটি সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং শতাব্দীব্যাপী জটিল ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক গতিশীলতার চূড়ান্ত পরিণতি। এর কারণগুলি বুঝতে হলে উভয় জাতির মধ্যে আন্তঃসম্পর্কিত অথচ প্রায়শই বিতর্কিত সম্পর্ক, ইউক্রেনের সোভিয়েত-পরবর্তী পশ্চিমা একীকরণের পথ, রাশিয়ার পরিবর্তিত নিরাপত্তা ধারণা এবং সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা, এবং ২০১৪ সালের মূল ঘটনাগুলি যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করেছে, সেগুলির গভীরে প্রবেশ করা প্রয়োজন। এই প্রতিবেদনটি এই অন্তর্নিহিত কারণগুলির একটি ব্যাপক, বহুমুখী বিশ্লেষণ প্রদান করার লক্ষ্য রাখে, তাৎক্ষণিক ট্রিগারগুলির বাইরে গিয়ে গভীর ঐতিহাসিক অভিযোগ, ভূ-রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা এবং আন্তর্জাতিক আইনি নীতিগুলি অন্বেষণ করে যা এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতকে সংজ্ঞায়িত করে।

I. ঐতিহাসিক ভিত্তি: একটি বিতর্কিত সম্মিলিত অতীত

এই বিভাগটি রাশিয়া-ইউক্রেন সম্পর্কের গভীর ঐতিহাসিক শিকড়গুলি নিয়ে আলোচনা করবে, যেখানে সম্মিলিত ঐতিহ্য, রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য এবং ইউক্রেনীয় জাতীয় পরিচয়ের জন্য দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের সময়কালগুলি তুলে ধরা হবে। এই ঐতিহাসিক স্তরগুলি বোঝা বর্তমান সংঘাতকে অনুধাবন করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উভয় জাতিই প্রায়শই তাদের অবস্থানকে ন্যায্যতা দিতে ঐতিহাসিক আখ্যানের আশ্রয় নেয়।

A. শতাব্দীর পরিক্রমায় আন্তঃসম্পর্কিত ইতিহাস: কিয়েভান রুস থেকে সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার আধিপত্য

কিয়েভান রুসের সম্মিলিত মধ্যযুগীয় ঐতিহ্যকে রাশিয়া প্রায়শই ঐতিহাসিক সম্পর্ক দাবি করার জন্য উল্লেখ করে, অন্যদিকে ইউক্রেন তার স্বতন্ত্র বিকাশের উপর জোর দেয়। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে, ১৬৫৪ সালের পেরেইয়াশ্লাভ চুক্তির মতো ঘটনার পরে ইউক্রেনের ভূখণ্ডের উল্লেখযোগ্য অংশগুলি ধীরে ধীরে রুশ সাম্রাজ্যের দ্বারা সংযুক্ত হয়, যা কসাক এবং রাশিয়ার মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক মিলন ঘটায় । এটি একটি সন্ধিক্ষণ ছিল যেখানে রাশিয়ার শাসনের অধীনে ইউক্রেনের স্বায়ত্তশাসন হ্রাস পেতে শুরু করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে, পোল্যান্ডের বিভাজনের সাথে সাথে, ইউক্রেনের বেশিরভাগ অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং এর স্বায়ত্তশাসন পদ্ধতিগতভাবে বিলুপ্ত করা হয়  

B. ইউক্রেনীয় পরিচয় ও সংস্কৃতির দমন

রুশ সাম্রাজ্য সক্রিয়ভাবে ইউক্রেনীয় ভাষা ও সংস্কৃতি দমন করার চেষ্টা করে। এর একটি প্রধান উদাহরণ হল আলেকজান্ডার দ্বিতীয়ের ১৮৭৬ সালের ইমস উকাজ, যা বেশিরভাগ ইউক্রেনীয় ভাষার বই প্রকাশ ও আমদানি, ইউক্রেনীয় ভাষায় জনসম্মুখে পারফরম্যান্স এবং বক্তৃতা, এমনকি সঙ্গীতের সাথে ইউক্রেনীয় পাঠ্য মুদ্রণও নিষিদ্ধ করে । এই রুশীকরণ নীতির লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনীয়দের আত্মীকরণ করা এবং তাদের স্বতন্ত্র জাতীয় পরিচয় অস্বীকার করা । নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, সোভিয়েত যুগের প্রথম দিকে (১৯৩০-এর দশকের শুরু পর্যন্ত) "কোরেনাইজেশন" (স্বদেশীকরণ) নীতির অধীনে ইউক্রেনীয় সংস্কৃতির একটি পুনরুত্থান ঘটে, যার মধ্যে প্রজাতন্ত্র জুড়ে একটি চিত্তাকর্ষক ইউক্রেনীয়করণ কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত ছিল । তবে, এই সময়কালটি ছিল অস্থায়ী, যা পরবর্তী দমন-পীড়নের পূর্ববর্তী।  

C. সোভিয়েত যুগ: হলোডোমর এবং ইউএসএসআর-এর মধ্যে ইউক্রেনের ভূমিকা

ইউক্রেন ১৯২২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল, রাশিয়া, বাইলোরাশিয়া এবং ট্রান্সককেশিয়ার সাথে । তবে, এই একীকরণটি রুশ বিপ্লব এবং সোভিয়েত সামরিক আগ্রাসনের পরে ইউক্রেনের স্বাধীনতার (ইউক্রেনীয় পিপলস রিপাবলিক, ১৯১৭-১৯২২) একটি সময়ের পর ঘটে । হলোডোমর (১৯৩২-১৯৩৩), একটি মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, যা প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ইউক্রেনীয়কে হত্যা করে এবং এটিকে "সন্ত্রাস-দুর্ভিক্ষ" বা "দুর্ভিক্ষ-গণহত্যা" হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় । স্ট্যালিন দ্বারা কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট এই বিপর্যয়মূলক ঘটনাটি ইউক্রেনীয়দের জন্য একটি গভীর ঐতিহাসিক আঘাত, যা সোভিয়েত দমন-পীড়ন এবং ইউক্রেনীয় জাতীয় ইচ্ছাকে ভেঙে দেওয়ার প্রচেষ্টার প্রতীক। এই ঐতিহাসিক আঘাত ইউক্রেনের রাশিয়ার প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে মৌলিকভাবে আকার দেয়।  

সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হওয়া সত্ত্বেও, ইউক্রেন ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যগুলির মধ্যে অন্যতম হয়, যা সোভিয়েত ব্লকের মধ্যে এর অনন্য অবস্থান তুলে ধরে । ১৯৫৪ সালে, ক্রিমিয়ান ওব্লাস্ট রুশ এসএফএসআর থেকে ইউক্রেনীয় এসএসআর-এ স্থানান্তরিত হয় । এই প্রশাসনিক স্থানান্তর, যদিও ইউএসএসআর-এর অভ্যন্তরীণ ছিল, ইউক্রেনের স্বাধীনতার পর একটি বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে।  

রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য এবং সাংস্কৃতিক দমনের একটি ধারাবাহিক ধারা শতাব্দীব্যাপী বিদ্যমান ছিল, যা ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদ এবং রাশিয়ার প্রতি অবিশ্বাসকে সরাসরি ইন্ধন যোগায়। ইউক্রেনকে "অবৈধ রাষ্ট্র" বা "একটি প্রকৃত জাতি-রাষ্ট্রও নয়" হিসাবে রাশিয়ার বর্তমান আখ্যান ইউক্রেনীয় সার্বভৌমত্ব এবং স্বতন্ত্র পরিচয়ের এই ঐতিহাসিক অস্বীকারের সরাসরি ধারাবাহিকতা। হলোডোমর, বিশেষত, ইউক্রেন দ্বারা গণহত্যার একটি কাজ হিসাবে বিবেচিত হয় , যা একটি গভীর ঐতিহাসিক অভিযোগ তৈরি করে যা রাশিয়ার প্রভাব থেকে ইউক্রেনের সম্পূর্ণ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে মৌলিকভাবে আকার দেয়। এই ঐতিহাসিক আঘাত রাশিয়ার যে কোনো অনুভূত অনুপ্রবেশকে কেবল একটি ভূ-রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং একটি অস্তিত্বের হুমকি হিসাবে দেখে।  

১৯৯১ সালের স্বাধীনতা ভোট এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের ঘোষণা ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে এর বিদ্যমান সীমানার মধ্যে স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক বিবৃতি নয়, বরং একটি আইনি নীতি (  

uti possidetis juris) যে নবগঠিত স্বাধীন রাষ্ট্রগুলি তাদের প্রশাসনিক সীমানা উত্তরাধিকার সূত্রে পায় । ক্রিমিয়া এবং ডনবাসে রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপগুলি এই মৌলিক নীতিকে সরাসরি লঙ্ঘন করে, একটি রাজনৈতিক বিরোধকে আন্তর্জাতিক আইন এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত একটি আইনি বিরোধে পরিণত করে। ১৯৫৪ সালে ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনে স্থানান্তর স্বাধীনতার আগে ইউক্রেনীয় এসএসআর-এর মধ্যে এর প্রশাসনিক অন্তর্ভুক্তিকে আরও দৃঢ় করে, যা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড হিসাবে এর আইনি অবস্থানকে শক্তিশালী করে।  

সারণী ১: রাশিয়া-ইউক্রেন সম্পর্কের প্রধান ঐতিহাসিক মাইলফলক (১৯৯১-পূর্ববর্তী)

তারিখ/সময়কালঘটনাপ্রাসঙ্গিকতা
১৬৫৪পেরেইয়াশ্লাভ চুক্তি

কসাক এবং রাশিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক মিলন, ইউক্রেনীয় স্বায়ত্তশাসনের ক্ষয় শুরু  

সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি - অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষরুশ সাম্রাজ্য দ্বারা ইউক্রেনের ভূখণ্ডের ক্রমবর্ধমান সংযুক্তি

ইউক্রেনীয় স্বায়ত্তশাসনের পদ্ধতিগত বিলুপ্তি  

১৮৭৬ইমস উকাজ

ইউক্রেনীয় ভাষা ও সংস্কৃতির রুশ সাম্রাজ্য দ্বারা দমন  

১৯১৭-১৯২২ইউক্রেনীয় পিপলস রিপাবলিক এবং সোভিয়েত সামরিক আগ্রাসন

রুশ বিপ্লব এবং সোভিয়েত হস্তক্ষেপের পর ইউক্রেনের সংক্ষিপ্ত স্বাধীনতা  

১৯২২ইউএসএসআর-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি

সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হিসাবে ইউক্রেনের আনুষ্ঠানিক সংযুক্তি  

১৯৩২-১৯৩৩হলোডোমর

মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, যা ইউক্রেনীয়দের জন্য গভীর ঐতিহাসিক আঘাত ও সোভিয়েত নিপীড়নের প্রতীক  

১৯৫৪ক্রিমিয়ান ওব্লাস্ট ইউক্রেনীয় এসএসআর-এ স্থানান্তরিত

সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক স্থানান্তর, যা স্বাধীনতার পর বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে  

১৯৮০-এর দশকইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদের উত্থান, পিপলস মুভমেন্ট অফ ইউক্রেন প্রতিষ্ঠিত

সোভিয়েত ইউনিয়নের উদারীকরণের ফলে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি  

১৯৯০ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের ঘোষণা

ইউক্রেনের নিজস্ব রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং নিরপেক্ষতার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ  

১৯৯১ইউক্রেনের স্বাধীনতার জন্য ভোট, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি

ইউক্রেনের সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ, আন্তর্জাতিক সীমানার ভিত্তি স্থাপন  

II. সোভিয়েত-পরবর্তী স্বাধীনতা এবং ভিন্ন পথ (১৯৯১-২০১৩)

স্বাধীনতা লাভের পর, ইউক্রেন রাষ্ট্র-গঠনের পথে যাত্রা করে এবং ইউরো-আটলান্টিক কাঠামোতে একীভূত হওয়ার চেষ্টা করে, যা রাশিয়ার "নিকটবর্তী বিদেশ" এবং তার নিজস্ব নিরাপত্তা স্বার্থের ধারণার সাথে ক্রমবর্ধমানভাবে সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে। এই বিভাগে ইউক্রেনের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, পশ্চিমা জোটের প্রতি তার আকাঙ্ক্ষা এবং ন্যাটো সম্প্রসারণ নিয়ে রাশিয়ার সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা সহ এই ভিন্ন পথগুলির বিশদ বিবরণ থাকবে।

A. ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ: বুদাপেস্ট স্মারকলিপি

স্বাধীনতা লাভের পর, ইউক্রেন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ উত্তরাধিকার সূত্রে পায় । ১৯৯৪ সালে, ইউক্রেন তার সমস্ত কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড রাশিয়ায় স্থানান্তরিত করতে এবং তার ভূখণ্ডে কৌশলগত লঞ্চারগুলি ভেঙে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় । বুদাপেস্ট স্মারকলিপিটি ১৯৯৪ সালের ৫ ডিসেম্বর রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা স্বাক্ষরিত হয় । পারমাণবিক অপ্রসারণ চুক্তি (NPT) তে ইউক্রেনের অ-পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসাবে যোগদানের বিনিময়ে, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতাকে সম্মান করতে এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ বা হুমকি না দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় । এটি একটি আইনগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ছিল, যদিও এটি একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি ছিল না । রাশিয়া ১৯৯৯ সালে ইউরোপীয় নিরাপত্তা সনদ স্বাক্ষর করে প্রতিটি রাষ্ট্রের "তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেছে নেওয়া বা পরিবর্তন করা" এবং জোটে যোগদানের অধিকারকে আরও নিশ্চিত করে  

ইউক্রেন তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার ত্যাগ করে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সম্পদ ছিল, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে তার সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা সম্পর্কিত স্পষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে । ২০১৪ এবং ২০২২ সালে রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপগুলি এই প্রতিশ্রুতিগুলিকে সরাসরি লঙ্ঘন করে । এই লঙ্ঘন কেবল একটি কূটনৈতিক ব্যর্থতা নয়; এটি অপ্রসারণের নীতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে মৌলিকভাবে ক্ষুণ্ন করে। এটি একটি বিপজ্জনক বার্তা দেয় যে রাষ্ট্রগুলি এই ধরনের চুক্তি বিশ্বাস করতে পারে না, যা আত্মরক্ষার উপায় হিসাবে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তারকে সম্ভাব্যভাবে উৎসাহিত করতে পারে। এটি রাশিয়ার অবস্থানে একটি গভীর অসঙ্গতিও তুলে ধরে, কারণ এটি ইউরোপীয় নিরাপত্তা সনদ স্বাক্ষর করে রাষ্ট্রগুলির জোট বেছে নেওয়ার অধিকারকে নিশ্চিত করেছিল , অথচ একই সাথে ইউক্রেনের পছন্দগুলির বিরোধিতা করছিল।  

B. পশ্চিমা একীকরণের জন্য ইউক্রেনের আকাঙ্ক্ষা: ইইউ এবং ন্যাটো অংশীদারিত্ব

১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্র নীতি ইইউ, রাশিয়া এবং অন্যান্য শক্তিশালী সত্তার সাথে সহযোগিতার ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্য রাখে । ইউক্রেন ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ন্যাটোর পার্টনারশিপ ফর পিসে যোগ দেয়, যা অ-ন্যাটো ইউরোপীয় এবং সোভিয়েত-পরবর্তী রাষ্ট্রগুলির জন্য একটি সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা । রাশিয়াও ১৯৯৪ সালের জুনে এই অংশীদারিত্বে যোগ দেয় । ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে, ইউক্রেন এবং ন্যাটো একটি স্বতন্ত্র সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করে, যার মধ্যে একটি ন্যাটো-ইউক্রেন কমিশন অন্তর্ভুক্ত ছিল  

ইইউ এবং ইউক্রেনের মধ্যে একটি নতুন "অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি" নিয়ে আলোচনা ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়, যা নিশ্চিত করে যে "ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ইউরোপে" । এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক, আইনি এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক, যা সম্ভাব্যভাবে ইইউতে যোগদানের দিকে নিয়ে যেতে পারে । ২০০৪ সালের অরেঞ্জ বিপ্লব, যা পশ্চিমা-ভিত্তিক ভিক্টর ইউশচেঙ্কো এবং রুশ-পন্থী ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের মধ্যে একটি ত্রুটিপূর্ণ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দ্বারা উদ্ভূত হয়েছিল, ইইউ/ন্যাটো এবং রাশিয়ার মধ্যে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ সংঘাতকে তুলে ধরে । এই "রঙিন বিপ্লব" মস্কোকে উদ্বিগ্ন করে তোলে । ইউক্রেনের সংসদ ২০১৩ সালে ইইউ-ইউক্রেন অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি চূড়ান্ত করার অনুমোদন দেয়  

C. রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক মতবাদ: "নিকটবর্তী বিদেশ" এবং প্রভাবের ক্ষেত্র

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, রাশিয়া ইউক্রেনকে তার প্রভাবের ক্ষেত্র হিসাবে দেখে, যাকে প্রায়শই "নিকটবর্তী বিদেশ" হিসাবে উল্লেখ করা হয় । রাশিয়া গ্যাসের দাম হেরফের করে এবং ইউক্রেনীয় রপ্তানির উপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তার প্রভাব প্রদর্শন করে , বিশেষ করে ২০০৬ সালে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে । রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০০৮ সালের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে বলেছিলেন বলে জানা যায় যে ইউক্রেন "একটি প্রকৃত জাতি-রাষ্ট্রও নয়" । এই বিবৃতি ইউক্রেনীয় সার্বভৌমত্ব এবং বৈধতাকে রাশিয়ার গভীর অস্বীকারকে প্রকাশ করে, যা ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। রাশিয়া ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণের বিরোধিতা করে । ২০০৮ সালে, পুতিন জর্জিয়া এবং ইউক্রেনকে সদস্যপদ অ্যাকশন প্ল্যান (MAPs) প্রসারিত করার বিরোধিতা করেন এবং ন্যাটো সদস্যরা ঐকমত্যের অভাবে MAPs প্রস্তাব করতে অস্বীকার করে । ২০০৮ সালে জর্জিয়ার রুশ আক্রমণ, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে একটি জর্জীয় সামরিক অভিযানের পর, উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে এবং সোভিয়েত-পরবর্তী অঞ্চলে তার প্রভাব জাহির করার জন্য রাশিয়ার শক্তি প্রয়োগের ইচ্ছাকে প্রদর্শন করে  

ন্যাটো সম্প্রসারণের প্রতি রাশিয়ার বিরোধিতা এবং ইউক্রেনের অবৈধতা সম্পর্কে তার দাবি নিরাপত্তা উদ্বেগ হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। তবে, গ্যাসের দাম হেরফের করা, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং ইউক্রেনীয় নির্বাচনে হস্তক্ষেপের ধারাবাহিক নিদর্শন রাশিয়ার একটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে নির্দেশ করে যে ইউক্রেনকে তার প্রভাবের ক্ষেত্রের মধ্যে রাখা, ইউক্রেনের সার্বভৌম পছন্দ নির্বিশেষে। "নিকটবর্তী বিদেশ" ধারণা একটি শ্রেণিবিন্যাসগত সম্পর্ককে বোঝায় যেখানে রাশিয়া তার প্রতিবেশীদের পররাষ্ট্র নীতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে। এই অন্তর্নিহিত সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা, কেবল প্রতিরক্ষামূলক উদ্বেগ নয়, রাশিয়ার পদক্ষেপের গভীর কারণ, যেখানে ন্যাটো সম্প্রসারণ ইউক্রেনের অভিমুখ নিয়ন্ত্রণ করার পূর্ব-বিদ্যমান আকাঙ্ক্ষার জন্য একটি সুবিধাজনক অজুহাত বা ত্বরক হিসাবে কাজ করে। এই বিষয়টি যে রাশিয়া ২০০৮ সালে জর্জিয়া আক্রমণ করেছিল  

তার ন্যাটোতে যোগদানের কোনো বাস্তব সম্ভাবনা থাকার আগেই আরও সমর্থন করে যে রাশিয়ার প্রতিশোধমূলক মনোভাব ন্যাটোর শারীরিক উপস্থিতির আগে থেকেই ছিল এবং এটি কেবল তার প্রতিক্রিয়া নয়।  

D. ন্যাটো সম্প্রসারণ বিতর্ক: রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগ বনাম সার্বভৌম পছন্দ

ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ সম্পর্কিত বিতর্ক ১৯৮৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে চলে আসছে, যখন সোভিয়েত-মিত্র কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলির পতন ইউরোপীয় প্রভাবের ক্ষেত্রগুলিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে । রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ দাবি করে যে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর অ-সম্প্রসারণের বিষয়ে একটি মৌখিক চুক্তি হয়েছিল এবং জোট তার সম্প্রসারণের মাধ্যমে এটি লঙ্ঘন করেছে । বিপরীতে, ন্যাটোর নেতারা অস্বীকার করেন যে এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, এবং বলেন যে এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে নেওয়া হতো । সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ, যিনি ১৯৯০ সালের আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, পরবর্তীতে "পূর্বে ন্যাটোর অ-সম্প্রসারণের গ্যারান্টি" এর অস্তিত্ব সম্পর্কে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কথা বলেছেন, কিছু সাক্ষাৎকারে এর অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছেন এবং অন্যদের মধ্যে অস্বীকার করেছেন  

বিতর্কটি এই বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় যে ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারির বিবৃতিগুলি প্রতিশ্রুতি ছিল নাকি জার্মান unification-এর জন্য সোভিয়েত সম্মতি নিশ্চিত করার জন্য কেবল কূটনৈতিক কৌশল ছিল । জর্জ এফ. কেনান এবং জন মিয়ারশেইমারের মতো সমালোচকরা সতর্ক করেছিলেন যে ন্যাটো সম্প্রসারণ রাশিয়ান জাতীয়তাবাদকে উস্কে দেবে এবং সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে, রাশিয়ার "বৈধ প্রভাবের ক্ষেত্র" লঙ্ঘন করবে । অন্যান্য পণ্ডিতরা ন্যাটোকে মার্কিন বৈশ্বিক স্বার্থ পরিবেশনকারী একটি আক্রমণাত্মক শক্তি হিসাবে দেখেছিলেন । রাশিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে, ন্যাটো সম্প্রসারণ, বিশেষ করে ২০০৮ সালের ঘোষণা যে ইউক্রেন এবং জর্জিয়া অবশেষে জোটে যোগ দেবে, একটি অস্তিত্বের হুমকি এবং ঘেরাও হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল  

ন্যাটো সম্প্রসারণ কীভাবে অনুভূত হয় তা নিয়ে একটি স্পষ্ট বৈপরীত্য বিদ্যমান । রাশিয়া এটিকে একটি "অস্তিত্বের হুমকি" এবং "ঘেরাও" হিসাবে দেখে যা কথিত প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে । ন্যাটো এবং এর সদস্যরা, তবে, যুক্তি দেয় যে এটি সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলির দ্বারা সম্ভাব্য রাশিয়ান আগ্রাসন থেকে সুরক্ষার জন্য একটি স্বেচ্ছামূলক জোট । ন্যাটোর প্রকৃতি - প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরোধ নাকি আক্রমণাত্মক সম্প্রসারণ - সম্পর্কে এই মৌলিক মতবিরোধ সংঘাতের একটি মূল আদর্শিক বিভাজন। এটি তুলে ধরে যে কীভাবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট (সোভিয়েত আধিপত্য) পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির নিরাপত্তা পছন্দগুলিকে আকার দেয়, তাদের ন্যাটোর দিকে ঠেলে দেয়, যখন রাশিয়া এই পছন্দগুলিকে ঐতিহাসিক অভিযোগ এবং অনুভূত বিশ্বাসঘাতকতার লেন্সের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করে। ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন রাশিয়ার ২০২২ সালের আক্রমণের  

পরে ন্যাটোর সদস্যপদ চেয়েছিল , যা রাশিয়ার আখ্যানকে আরও জটিল করে তোলে, যা ইঙ্গিত করে যে তার নিজস্ব পদক্ষেপগুলি সেই সম্প্রসারণকে চালিত করছে যার সে বিরোধিতা করার দাবি করে।  

সারণী ২: সোভিয়েত-পরবর্তী ইউক্রেন: প্রধান ঘটনা এবং আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা (১৯৯১-২০২১)

তারিখ/সময়কালঘটনাপ্রাসঙ্গিকতা
১৯৯১, ১ ডিসেম্বরইউক্রেন স্বাধীনতার জন্য ভোট দেয়

সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির মধ্যে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা  

১৯৯৪, ১৪ জানুয়ারিপারমাণবিক ওয়ারহেড সুরক্ষিত করা

ইউক্রেন তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার রাশিয়ায় হস্তান্তর করতে সম্মত হয়  

১৯৯৪, ৮ ফেব্রুয়ারিইউক্রেন ন্যাটোর পার্টনারশিপ ফর পিসে যোগ দেয়

পশ্চিমা নিরাপত্তা কাঠামোর সাথে ইউক্রেনের প্রথম দিকের সংযোগ  

১৯৯৪, ৫ ডিসেম্বরবুদাপেস্ট স্মারকলিপি স্বাক্ষরিত

ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিনিময়ে  

১৯৯৬, ২৮ জুননতুন সংবিধান অনুমোদিত

ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ  

১৯৯৭, ৯ জুলাইন্যাটো, ইউক্রেন অংশীদারিত্ব গভীর করে

প্রতিরক্ষা জোটের সাথে ইউক্রেনের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়  

২০০০, সেপ্টেম্বর-নভেম্বরগনগাদজে কেলেঙ্কারি প্রতিবাদ উস্কে দেয়

ইউক্রেনের অভিজাতদের মধ্যে দুর্নীতি নিয়ে জন অসন্তোষ  

২০০৪, নভেম্বর-ডিসেম্বরঅরেঞ্জ বিপ্লব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনকে উল্টে দেয়

ইউক্রেনের ভূ-রাজনৈতিক অভিমুখ নিয়ে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের প্রকাশ  

২০০৬, জানুয়ারিরাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়

ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার শক্তি নির্ভরতা এবং অর্থনৈতিক প্রভাবের প্রদর্শন  

২০০৮, ৩ এপ্রিলন্যাটোর সম্প্রসারণ বিড বিরোধিতার সম্মুখীন হয়

ইউক্রেন ও জর্জিয়ার ন্যাটো সদস্যপদ আকাঙ্ক্ষার প্রতি রাশিয়ার বিরোধিতা  

২০০৮, আগস্টরাশিয়া জর্জিয়া আক্রমণ করে

সোভিয়েত-পরবর্তী অঞ্চলে রাশিয়ার শক্তি প্রয়োগের ইচ্ছার প্রদর্শন  

২০০৮, সেপ্টেম্বরনতুন ইইউ সম্পর্কের জন্য আলোচনা শুরু হয়

ইউরোপের সাথে ইউক্রেনের গভীর একীকরণের আকাঙ্ক্ষা  

২০১০, ৭ ফেব্রুয়ারিইয়ানুকোভিচ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন

ইউক্রেনের রাজনৈতিক গতিশীলতায় পরিবর্তন  

২০১১, মে-ডিসেম্বরটিমোশেঙ্কোকে সাজা দেওয়া হয়, ব্রাসেলস চুক্তি স্থগিত করে

ইউক্রেনের বিচার ব্যবস্থার রাজনৈতিকীকরণ এবং ইইউ সম্পর্ককে প্রভাবিত করে  

২০১৩, ২১ নভেম্বরইয়ানুকোভিচ ইইউ আলোচনা থেকে সরে আসেন

ইউরোমাইদান প্রতিবাদের তাৎক্ষণিক কারণ, রাশিয়ার চাপের প্রভাব  

III. সন্ধিক্ষণ: ২০১৪ এবং প্রাথমিক সংঘাত

২০১৪ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা রাশিয়া-ইউক্রেন সম্পর্কের প্রকৃতিকে উত্তেজনা থেকে সরাসরি শত্রুতা এবং সশস্ত্র সংঘাতে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করে। এই বিভাগে ইউরোমাইদান বিপ্লব, রাশিয়ার ক্রিমিয়া দ্রুত সংযুক্তি এবং ডনবাসে যুদ্ধের সূচনা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে, যা ২০২২ সালের আক্রমণের তাৎক্ষণিক পূর্বসূরী।

A. বিপ্লবের মর্যাদা (ইউরোমাইদান): ইউক্রেনের ইউরোপ-পন্থী পরিবর্তন

২০১৩ সালের নভেম্বরে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ হঠাৎ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে একটি অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি স্বাক্ষর করা থেকে সরে আসেন, পরিবর্তে রুশ-নেতৃত্বাধীন ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বেছে নেন । রাশিয়া এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ চাপ প্রয়োগ করেছিল । এই জোরপূর্বক প্রত্যাহার ইউরোমাইদান নামে পরিচিত ব্যাপক প্রতিবাদের সূত্রপাত ঘটায়, যা দ্রুত ১৯৮৯ সালের পর ইউরোপের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক গণআন্দোলনে পরিণত হয় । বিক্ষোভকারীরা ইয়ানুকোভিচের পদত্যাগের দাবি জানায়, সরকারের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাশিয়ার প্রভাবের বিরোধিতা করে  

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিয়েভে বিক্ষোভকারী এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষের মাধ্যমে প্রতিবাদগুলি চূড়ান্ত রূপ নেয়, যার ফলে ১০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় । ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, ইয়ানুকোভিচ এবং বিরোধী নেতারা দ্রুত নির্বাচন এবং সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, কিন্তু ইয়ানুকোভিচ সেই রাতে গোপনে কিয়েভ থেকে পালিয়ে যান । ২২ ফেব্রুয়ারি, ইউক্রেনের সংসদ ইয়ানুকোভিচকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব ত্যাগের কারণ দেখিয়ে ৩২৮-০ ভোটে পদ থেকে অপসারণের পক্ষে ভোট দেয় এবং নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়সূচী নির্ধারণ করে । এটিকে "মর্যাদার বিপ্লব" হিসাবে দেখা হয়েছিল  

ইয়ানুকোভিচের ইইউ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত রাশিয়ার চাপের প্রত্যক্ষ ফল ছিল । ইউরোমাইদান বিপ্লব, ইউরোপের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য একটি জনপ্রিয় আন্দোলন , রাশিয়া এটিকে একটি পশ্চিমা-পরিকল্পিত "অভ্যুত্থান" হিসাবে দেখেছিল যা তার প্রভাবের ক্ষেত্রকে হুমকির মুখে ফেলে। এটি অবিলম্বে রাশিয়ার ক্রিমিয়া সংযুক্তি এবং ডনবাস যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। এই ক্রমটি রাশিয়ার শূন্য-সমষ্টির দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে: ইউক্রেনের পশ্চিমের দিকে অগ্রসর হওয়াকে রাশিয়ার জন্য সরাসরি ক্ষতি হিসাবে দেখা হয়েছিল, যা ইউক্রেনের স্বাধীন ভূ-রাজনৈতিক জোটকে প্রতিরোধ করার জন্য আক্রমণাত্মক হস্তক্ষেপকে ন্যায্যতা দেয়। এটি প্রকাশ করে যে রাশিয়ার প্রাথমিক উদ্বেগ কেবল ন্যাটো সম্প্রসারণ ছিল না, বরং ইউক্রেনের যেকোনো পশ্চিমা কাঠামোর সাথে একীভূত হওয়ার সার্বভৌম পছন্দ, যা মস্কোর প্রতিবেশীর উপর দীর্ঘকাল ধরে থাকা সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে মৌলিকভাবে চ্যালেঞ্জ করেছিল।  

B. রাশিয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া: ক্রিমিয়া সংযুক্তি

ইয়ানুকোভিচের অপসারণের পর, দক্ষিণ ও পূর্ব ইউক্রেনে রুশ-পন্থী এবং প্রতি-বিপ্লবী প্রতিবাদ শুরু হয় । রাশিয়ান-ভিত্তিক গণমাধ্যম ইউক্রেনের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি অবৈধ "ফ্যাসিবাদী জান্তা" হিসাবে চিত্রিত করে এবং দাবি করে যে জাতিগত রুশরা আসন্ন বিপদে রয়েছে । ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, মুখোশ পরা রুশ সৈন্যরা কোনো চিহ্ন ছাড়াই ("ছোট সবুজ মানুষ") ক্রিমিয়ার কৌশলগত পয়েন্টগুলি দখল করে, যার মধ্যে ক্রিমিয়ান সংসদ এবং সরকারি ভবনগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল । রাশিয়া পরবর্তীতে স্বীকার করে যে তার সৈন্যরা জড়িত ছিল  

২০১৪ সালের ১৬ মার্চ, ক্রিমিয়ায় স্বাধীনতা এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে সংযুক্তির জন্য একটি "গণভোট" অনুষ্ঠিত হয় । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, যার মধ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদও অন্তর্ভুক্ত, এই গণভোট বা পরবর্তী সংযুক্তিকে ব্যাপকভাবে নিন্দা করে এবং স্বীকৃতি দেয়নি । উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্স স্পষ্টভাবে বলেছে যে এটি ক্রিমিয়ার অবৈধ সংযুক্তিকে কখনই স্বীকৃতি দেয়নি কারণ এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং রাশিয়ার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে । রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৪ সালের ২১ মার্চ ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করে । এই কাজটিকে বিশ্লেষকরা "বৃহত্তর-রাশিয়া ইরেডেন্টিজমের ইশতেহার" হিসাবে বর্ণনা করেছেন  

C. ডনবাস যুদ্ধ: উৎপত্তি, রাশিয়ার গোপন সমর্থন এবং মিনস্ক চুক্তি

ক্রিমিয়া সংযুক্তির সাথে সাথে, রুশ-পন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর গোপন সমর্থনে, পূর্ব ইউক্রেন, বিশেষ করে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল (ডনবাস) নিয়ন্ত্রণের জন্য ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর সাথে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হয় । ডনবাস যুদ্ধ ২০১৪ সালের এপ্রিলে শুরু হয় যখন রুশ আধা-সামরিক বাহিনী, ইগর 'স্ট্রোলকভ' গির্কিনের মতো রুশ নাগরিকদের নেতৃত্বে, ডনবাসের শহর এবং সরকারি ভবনগুলি দখল করে । গির্কিন পরবর্তীতে স্বীকার করেন যে তিনি "এই যুদ্ধের ট্রিগার টেনেছিলেন"  

বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক (DPR) এবং লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক (LPR) কে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করে । ফাঁস হওয়া ইমেল এবং কলগুলি পরবর্তীতে প্রকাশ করে যে রুশ রাষ্ট্র এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থায়ন ও সংগঠিত করেছিল, স্থানীয় নেতাদের রুশ নিরাপত্তা সংস্থার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা প্রতিস্থাপন করেছিল । রাশিয়ার সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের সাথে সংঘাত বৃদ্ধি পায়, যার মধ্যে ট্যাঙ্ক এবং ভারী অস্ত্র সীমান্ত অতিক্রম করে । ন্যাটো অনুমান করে যে ২০১৪ সালের আগস্টের মধ্যে "১,০০০ এরও বেশি" রুশ সৈন্য ডনবাসে কাজ করছিল  

মিনস্ক যুদ্ধবিরতি চুক্তি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত হয়, এরপর ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিনস্ক II স্বাক্ষরিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল সংঘাতের অবসান ঘটানো এবং একটি "নিরাপত্তা অঞ্চল" স্থাপন করা । তবে, এই চুক্তিগুলি বারবার লঙ্ঘিত হয়, বিশেষ করে রুশ-সমর্থিত বাহিনীর দ্বারা যুদ্ধ এবং গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকে । ২০২২ সালের শুরুর দিকে এই সংঘাতে ১৪,০০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় । আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত এবং ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত রায় দিয়েছে যে রাশিয়া ২০১৪ সাল থেকে DPR এবং LPR নিয়ন্ত্রণ করছিল । ইউক্রেনের সংসদ ডনবাস অঞ্চলকে রাশিয়ার দ্বারা দখলকৃত বলে ঘোষণা করে  

২০১৪ সালের ঘটনাগুলি হাইব্রিড যুদ্ধের একটি স্পষ্ট নিদর্শন প্রদর্শন করে: গোপন সামরিক অভিযান (ক্রিমিয়ায় "ছোট সবুজ মানুষ" ), প্রক্সি বাহিনী (ডনবাসে বিচ্ছিন্নতাবাদী ), এবং ব্যাপক ভুল তথ্য প্রচার (ইউক্রেনীয় সরকারকে "ফ্যাসিবাদী জান্তা" হিসাবে চিত্রিত করা )। এটি একটি প্রচলিত আক্রমণ ছিল না, বরং ইউক্রেনকে অস্থিতিশীল করা, "মাটিতে ঘটনা" তৈরি করা (সংযুক্তি), এবং ভবিষ্যতের হস্তক্ষেপের জন্য একটি অজুহাত তৈরি করার একটি সুচিন্তিত কৌশল ছিল। এই পদ্ধতি রাশিয়াকে প্রাথমিকভাবে সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করতে দেয়, আন্তর্জাতিকভাবে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তোলে যখন কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলি অর্জন করা হয়। ভুল তথ্য ব্যবহার করে একটি মিথ্যা আখ্যান তৈরি করার এই পদ্ধতি (যেমন, "জাতিগত রুশদের আসন্ন বিপদ" ) রাশিয়ার ২০২২ সালের আক্রমণের জন্য পরবর্তী ন্যায্যতা প্রদানের একটি ছক হয়ে ওঠে।  

IV. পূর্ণ মাত্রার আক্রমণে বৃদ্ধি: ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা (২০১৫-২০২২)

২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যবর্তী সময়কালে ডনবাসে একটি সুপ্ত সংঘাত, ক্রমাগত কূটনৈতিক অচলাবস্থা এবং রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সমাবেশ দেখা যায়। এই বিভাগে আলোচনা করা হবে কীভাবে এই উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে ন্যাটো সম্প্রসারণ নিয়ে চলমান বিতর্ক এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চয়তার জন্য ক্রমবর্ধমান দাবিগুলির উপর মনোযোগ দিয়ে, যা পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের মঞ্চ তৈরি করে।

A. স্থগিত শান্তি প্রক্রিয়া এবং ডনবাসে চলমান সংঘাত

মিনস্ক চুক্তি (২০১৪/২০১৫) সত্ত্বেও, যা যুদ্ধবিরতি এবং বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিল, ডনবাসে আট বছর ধরে যুদ্ধ চলতে থাকে । যুদ্ধবিরতি বারবার লঙ্ঘিত হয়, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা প্রায়শই রাশিয়ান এবং রাশিয়ান প্রক্সি বাহিনীগুলিকে দায়ী করে । সংঘাতটি একটি "স্থগিত সংঘাত"-এ পরিণত হয়, যেখানে স্থির পরিখা যুদ্ধ এবং প্রতি মাসে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয় । ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে, ইউক্রেনের সংসদ একটি বিল পাস করে যা বিচ্ছিন্নতাবাদী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলিকে "অস্থায়ীভাবে দখলকৃত অঞ্চল" এবং রাশিয়াকে "আগ্রাসী" হিসাবে চিহ্নিত করে  

২০১৯ সালের জুন মাস থেকে রাশিয়ার পদক্ষেপ, যেমন ডনবাসে ইউক্রেনীয়দের মধ্যে রাশিয়ান পাসপোর্ট বিতরণ, ইউক্রেন দ্বারা সংযুক্তির একটি পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হয়েছিল । ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে, ইউক্রেনীয় সৈন্যদের ২৫ জন নিহত হয়, যা ২০২০ সালের পুরো সময়ের ৫০ জনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, যা ডনবাসে শত্রুতার নতুন করে বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়  

মিনস্ক চুক্তিগুলির ক্রমাগত লঙ্ঘন রাশিয়ান-সমর্থিত বাহিনী দ্বারা, আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, ইঙ্গিত দেয় যে রাশিয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জন বা ইউক্রেনীয় সার্বভৌমত্বের অধীনে ডনবাসকে পুনরায় একত্রিত করা ছিল না। পরিবর্তে, "স্থগিত সংঘাত" কিয়েভের বিরুদ্ধে প্রভাব এবং অস্থিতিশীলতার একটি স্থায়ী লিভার হিসাবে কাজ করেছিল, যা ইউক্রেনের পশ্চিমের সাথে সম্পূর্ণ একীকরণকে বাধা দেয় এবং ভবিষ্যতের হস্তক্ষেপের জন্য একটি অজুহাত বজায় রাখে। রাশিয়ান পাসপোর্ট বিতরণ আরও ইঙ্গিত দেয় যে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ছিল যা কার্যত সংযুক্তি এবং ইউক্রেনীয় সার্বভৌমত্বের ক্ষয়কে লক্ষ্য করে, শান্তি প্রক্রিয়া মেনে চলা নয়। এটি বোঝায় যে রাশিয়া মিনস্ক চুক্তিগুলিকে একটি লক্ষ্য অর্জনের উপায় (প্রভাব বজায় রাখা) হিসাবে দেখেছিল, স্বয়ং একটি লক্ষ্য (শান্তি) হিসাবে নয়।  

B. ন্যাটো সম্প্রসারণ বিতর্ক: রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগ বনাম সার্বভৌম পছন্দ (পুনরায় আলোচনা)

ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ সম্পর্কিত বিতর্ক একটি কেন্দ্রীয় বিতর্কের বিষয় হিসাবে রয়ে গেছে, যা ২০২১ সালের শেষের দিকে নতুন করে মনোযোগ আকর্ষণ করে । রাশিয়ার অবস্থান ধারাবাহিকভাবে ন্যাটো সম্প্রসারণকে তার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করে, বিশেষ করে ইউক্রেনের সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি । ন্যাটো বজায় রাখে যে এটি তার সম্প্রসারণকে সীমাবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কখনই নেয়নি এবং ইউক্রেনের প্রতি তার সমর্থন রাশিয়ার জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করে না । তারা জোর দিয়েছিল যে দেশগুলি রাশিয়ান আগ্রাসনের ভয়ে স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছে । ২০১৪ সালের পর পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো বাহিনী এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মোতায়েন রাশিয়ার ক্রিমিয়া সংযুক্তি এবং ডনবাসে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনের প্রতিক্রিয়া ছিল, সম্প্রসারণবাদী আগ্রাসনের কাজ ছিল না  

C. নিরাপত্তা নিশ্চয়তার জন্য রাশিয়ার দাবি এবং ইউক্রেনের অব্যাহত পশ্চিমা জোট

২০২১ সালের শেষের দিকে, রাশিয়া ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে সৈন্য সমাবেশ করে এবং পশ্চিমের কাছে দাবি জানায়, যার মধ্যে ইউক্রেনের ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের উপর নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত ছিল । বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে ন্যাটো থেকে বাদ দেওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে, এই নীতি উল্লেখ করে যে প্রতিটি রাষ্ট্রের "তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেছে নেওয়া বা পরিবর্তন করার" অধিকার রয়েছে । রাশিয়ার চাপ সত্ত্বেও, ইউক্রেন পশ্চিমা একীকরণের পথে চলতে থাকে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইউক্রেনের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল অনুমোদন করেন, যার লক্ষ্য ছিল ন্যাটো সদস্যপদ । তার পূর্বসূরি ইউক্রেনকে ন্যাটো এবং ইইউ সদস্যপদে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি সাংবিধানিক সংশোধনীতে স্বাক্ষর করেছিলেন । জেলেনস্কি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ-পন্থী অলিগার্ক এবং গণমাধ্যম চ্যানেলগুলির বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেন, যা রাশিয়ার প্রভাব থেকে সরে আসার আরও একটি ইঙ্গিত ছিল । ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপলাইন সম্পন্ন হয়, যা বাল্টিক সাগরের নিচে জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল, যা কিয়েভ দ্বারা একটি ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে দেখা হয়েছিল যা ইউক্রেনের জন্য একটি প্রধান আয়ের উৎস বন্ধ করে দেবে  

২০২১ সালের শেষের দিকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার জন্য রাশিয়ার দাবি, বিশেষ করে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের উপর নিষেধাজ্ঞা , প্রতিরক্ষামূলক হিসাবে উপস্থাপিত হয়েছিল। তবে, ইউক্রেনের রাষ্ট্রত্বকে রাশিয়ার ক্রমাগত অস্বীকার এবং জর্জিয়া ও ক্রিমিয়া/ডনবাসে তার আগ্রাসনের ইতিহাস বিবেচনা করে, এই দাবিগুলি একটি চরমপত্রের মতো কাজ করেছিল। এই দাবিগুলির পাশাপাশি ব্যাপক সৈন্য সমাবেশ ইঙ্গিত দেয় যে রাশিয়া কূটনৈতিক ফলাফল নির্বিশেষে আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, "নিরাপত্তা উদ্বেগ" কে একটি জনসমক্ষে ন্যায্যতা হিসাবে ব্যবহার করে। এটি একটি গভীর নিদর্শন প্রকাশ করে যেখানে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা (ইউক্রেনের ভূ-রাজনৈতিক অভিমুখ নিয়ন্ত্রণ করা) কোনো প্রকৃত নিরাপত্তা উদ্বেগকে আড়াল করে এবং শেষ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়, যা তার ইচ্ছাকে কার্যকর করার জন্য একটি আক্রমণাত্মক, পূর্ব-পরিকল্পিত আঘাতের দিকে পরিচালিত করে।  

D. সামরিক সমাবেশ এবং চূড়ান্ত অজুহাত

ইউক্রেনীয় সীমান্ত এবং ক্রিমিয়ায় রাশিয়ান সামরিক মোতায়েন ২০২১ সালের এপ্রিলে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, যা ১০০,০০০ এরও বেশি সৈন্যে পৌঁছে, ২০১৪ সালের পর সবচেয়ে বড় অঘোষিত সামরিক আন্দোলন । ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে, ইউক্রেন জানায় যে রাশিয়া অঞ্চলে স্নাইপার এবং ট্যাঙ্ক পাঠাচ্ছে, এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে, রুশ-নেতৃত্বাধীন জঙ্গিদের দ্বারা আর্টিলারি গোলাবর্ষণ বৃদ্ধির সাথে যুদ্ধ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়, যা একটি উস্কানি বা আক্রমণের অজুহাত হিসাবে দেখা হয়েছিল । ইউক্রেন আক্রমণ করার পরিকল্পনা বারবার অস্বীকার করা সত্ত্বেও, ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেন এবং ডনবাসে রুশ সৈন্যদের "শান্তিরক্ষী" হিসাবে প্রবেশের নির্দেশ দেন । এটি পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের তাৎক্ষণিক পূর্বসূরী ছিল।  

V. ২০২২ সালের আক্রমণের জন্য রাশিয়ার ঘোষিত ন্যায্যতা: একটি পরীক্ষা

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, রাশিয়া ইউক্রেনে একটি পূর্ণ মাত্রার সামরিক আক্রমণ শুরু করে, যাকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন "বিশেষ সামরিক অভিযান" বলে অভিহিত করেন। এই বিভাগে এই আক্রমণের জন্য রাশিয়ার ঘোষিত কারণগুলি সমালোচনামূলকভাবে পরীক্ষা করা হবে, আন্তর্জাতিক ঐকমত্য এবং বাস্তব তথ্যের সাথে সেগুলিকে তুলনা করে।

A. "নিরস্ত্রীকরণ" এবং "নব্য-নাৎসি মুক্তকরণ"-এর দাবি

পুতিন বলেছিলেন যে রাশিয়ার লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনকে "নিরস্ত্রীকরণ" এবং "নব্য-নাৎসি মুক্তকরণ" । তিনি ভিত্তিহীনভাবে দাবি করেছিলেন যে ইউক্রেনীয় সরকার পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত "নব্য-নাৎসি" নিয়ে গঠিত । এই আখ্যানটি ২০১৪ সাল থেকে ব্যবহৃত প্রচারণার ধারাবাহিকতা ছিল, যা ইউক্রেনের সরকারকে একটি অবৈধ "ফ্যাসিবাদী জান্তা" হিসাবে চিত্রিত করেছিল  

B. গণহত্যার অভিযোগ এবং রুশভাষী জনগণের সুরক্ষা

পুতিন ভিত্তিহীনভাবে দাবি করেছিলেন যে ডনবাস অঞ্চলের রুশরা আট বছর ধরে "কিয়েভ শাসনের দ্বারা সংঘটিত অপমান এবং গণহত্যার" শিকার হচ্ছে । এই দাবি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে discredited হয়েছিল । ইউক্রেনে রুশভাষী জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।  

C. ন্যাটোর হুমকি এবং ইউক্রেনের অবৈধতার আখ্যান

পুতিন জোর দিয়েছিলেন যে একটি প্রতিকূল ন্যাটো ইউক্রেনে তার বাহিনী এবং অবকাঠামো তৈরি করছে, যা রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করছে । এটি ২০২১ সালের শেষের দিকে একটি মূল দাবি ছিল, যা ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিল । পুতিন ইউক্রেনের রাষ্ট্র হিসাবে বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ইরেডেন্টিস্ট এবং সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিও প্রকাশ করেন । তিনি এর আগে বলেছিলেন যে ইউক্রেন "একটি প্রকৃত জাতি-রাষ্ট্রও নয়" এবং "নোভোরোসিয়া" (নতুন রাশিয়া) উল্লেখ করতে শুরু করেন, যা দক্ষিণ ইউক্রেনের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে একটি প্রাক্তন রুশ সাম্রাজ্যবাদী অঞ্চল । তিনি সামরিক হস্তক্ষেপের ন্যায্যতা হিসাবে কসোভোর স্বাধীনতার নজির এবং ন্যাটোর যুগোস্লাভিয়া বোমা হামলার কথা উল্লেখ করেন  

D. রাশিয়ার দাবির আন্তর্জাতিক অস্বীকৃতি

রাশিয়া বারবার ইউক্রেন আক্রমণ করার পরিকল্পনা অস্বীকার করেছিল আক্রমণের আগের দিন পর্যন্ত । আক্রমণের জন্য পুতিনের ঘোষিত কারণগুলি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে discredited হয়েছিল । আক্রমণকে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইইউ ও ন্যাটোর সাথে এর আরও একীকরণ প্রতিরোধ করার একটি প্রচেষ্টা হিসাবে দেখা হয়েছিল । আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত ইউক্রেনে রাশিয়ার সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু করে  

২০২২ সালের আক্রমণের জন্য রাশিয়ার ঘোষিত ন্যায্যতা - "নিরস্ত্রীকরণ," "নব্য-নাৎসি মুক্তকরণ," "গণহত্যা" - প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত নয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে এই দাবিগুলি প্রকৃত কারণ নয় বরং আগ্রাসনের একটি অপ্ররোচিত কাজকে অভ্যন্তরীণভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বৈধতা দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা  

অজুহাত বা প্রচারণার হাতিয়ার। এই কৌশল রাশিয়াকে তার সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসাবে চিত্রিত করতে দেয়, আন্তর্জাতিক আইন এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়। ২০১৪ সাল থেকে এই মিথ্যা আখ্যানগুলির ধারাবাহিকতা একটি সুচিন্তিত, দীর্ঘমেয়াদী তথ্য যুদ্ধ অভিযানকে তুলে ধরে।  

পুতিনের ইউক্রেনের রাষ্ট্র হিসাবে বৈধতাকে অস্বীকার এবং তার "নোভোরোসিয়া" এর আহ্বান একটি গভীর প্রতিশোধমূলক মতাদর্শকে প্রকাশ করে যা একটি ঐতিহাসিক রাশিয়ান প্রভাবের ক্ষেত্র পুনরুদ্ধার করতে চায়, কার্যকরভাবে পূর্ব ইউরোপের স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলির সোভিয়েত-পরবর্তী ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করে। এটি নিরাপত্তা উদ্বেগের বাইরেও যায়; এটি বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র এবং প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলির জন্য জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের নীতির সাথে একটি মৌলিক মতবিরোধের বিষয়। আক্রমণটি এইভাবে সীমানা পুনর্গঠন এবং আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি বৃহত্তর রাশিয়ান উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রকাশ, যা ইউক্রেনের স্বাধীন অস্তিত্বকে তার ঐতিহাসিক আখ্যান এবং ভূ-রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতি একটি অপমান হিসাবে দেখে।  

সারণী ৩: ২০২২ সালের আক্রমণের জন্য রাশিয়ার ঘোষিত কারণ বনাম আন্তর্জাতিক ঐকমত্য

রাশিয়ার দাবিআন্তর্জাতিক ঐকমত্য/তথ্য

বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রজাতন্ত্রগুলির জন্য সমর্থন  

বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রজাতন্ত্রগুলি ২০১৪ সাল থেকে রুশ-সমর্থিত এবং নিয়ন্ত্রিত ছিল; রাশিয়ার স্বীকৃতি এবং সৈন্য মোতায়েন ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে  

ডনবাসে রুশদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ভিত্তিহীন দাবি  

গণহত্যার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই; দাবিগুলি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে discredited  

ইউক্রেনীয় সরকারকে "নব্য-নাৎসি" হিসাবে অভিযোগ  

ভিত্তিহীন দাবি; ইউক্রেনীয় সরকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত; প্রচারণার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত  

ইউক্রেনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা  

ইউক্রেন ১৯৯৪ সালে বুদাপেস্ট স্মারকলিপির অধীনে পারমাণবিক অস্ত্রাগার ত্যাগ করেছিল  

ইউক্রেনে ন্যাটো সম্প্রসারণ এবং প্রতিকূল অবকাঠামো  

ন্যাটো একটি প্রতিরক্ষামূলক জোট; ইউক্রেনের যোগদানের আকাঙ্ক্ষা একটি সার্বভৌম পছন্দ; পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর মোতায়েন মূলত ২০১৪ সালের রাশিয়ান আগ্রাসনের পরে হয়েছিল  

ইউক্রেনের "নিরস্ত্রীকরণ" এবং "নব্য-নাৎসি মুক্তকরণ"  

শাসন পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক দখলের অজুহাত; একটি অপ্ররোচিত আগ্রাসনের কাজ হিসাবে ব্যাপকভাবে নিন্দিত  

ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রের বৈধতা অস্বীকার  

ইউক্রেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা সহ একটি সার্বভৌম, স্বাধীন রাষ্ট্র  

VI. আন্তর্জাতিক আইন এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব

এই বিভাগে আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে সংঘাত বিশ্লেষণ করা হবে, যা দেখাবে কীভাবে রাশিয়ার পদক্ষেপগুলি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন করে এমন প্রতিষ্ঠিত নিয়ম ও চুক্তিগুলিকে মৌলিকভাবে লঙ্ঘন করে। রাশিয়ার আগ্রাসনের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা বোঝার জন্য এই আইনি কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

A. আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং শক্তি প্রয়োগের নিষেধাজ্ঞার নীতি

কোনো রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ বা হুমকির নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক আইনের একটি ভিত্তি, যা জাতিসংঘের সনদের ২(৪) অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত । জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৬২৫ এবং ৩৩১৪ প্রস্তাবনাগুলি স্পষ্টভাবে বলে যে শক্তি প্রয়োগ বা হুমকির ফলে কোনো আঞ্চলিক অর্জনকে বৈধ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না । ১৯৭৫ সালের হেলসিঙ্কি ফাইনাল অ্যাক্ট, যা সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছিল, রাষ্ট্রগুলির আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাকে ইউরোপীয় নিরাপত্তার একটি ভিত্তি হিসাবে সংহিতাবদ্ধ করে এবং স্বাক্ষরকারীদের শক্তি প্রয়োগ বা হুমকি থেকে বিরত থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে । রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়ই OSCE-এর পক্ষ, যা CSCE থেকে বিকশিত হয়েছে, যা তাদের এই নীতিগুলির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে । রাশিয়ার আত্মরক্ষার দাবি তার পদক্ষেপগুলিকে ন্যায্যতা দিতে পারে না কারণ ইউক্রেন রাশিয়াকে আক্রমণ করেনি, বা ২০১৪ সালের ক্রিমিয়া দখল বা ২০২২ সালের আক্রমণের আগে কোনো শক্তি প্রয়োগের হুমকিও দেয়নি  

জাতিসংঘের সনদ, uti possidetis juris, বুদাপেস্ট স্মারকলিপি এবং ১৯৯৭ সালের বন্ধুত্ব চুক্তিসহ বিস্তারিত আইনি নীতি ও চুক্তিগুলি সম্মিলিতভাবে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য একটি অপ্রতিরোধ্য আইনি ভিত্তি তৈরি করে। রাশিয়ার পদক্ষেপগুলি এই নীতিগুলির প্রতিটিকেই সরাসরি লঙ্ঘন করে। এটি প্রদর্শন করে যে রাশিয়ার আক্রমণ কেবল একটি ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিয়ম-ভিত্তিক ব্যবস্থার একটি গভীর লঙ্ঘন। গণভোটের অবৈধতা আত্মনিয়ন্ত্রণের রাশিয়ার দাবিগুলিকে আরও ভেঙে দেয়, সেগুলিকে আঞ্চলিক আগ্রাসনের জন্য একটি আইনি মুখোশ হিসাবে প্রকাশ করে। এই ব্যাপক আইনি কাঠামোটি কেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়ার পদক্ষেপগুলিকে ব্যাপকভাবে নিন্দা করেছে এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  

B. ইউক্রেনের ১৯৯১ সালের সীমানা এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলির বৈধতা

Uti possidetis juris এর নীতি নির্দেশ করে যে নবগঠিত স্বাধীন রাষ্ট্রগুলি তাদের স্বাধীনতার সময় বিদ্যমান প্রশাসনিক সীমানা উত্তরাধিকার সূত্রে পায়, যদি না অন্যথায় সম্মত হয় । এই নীতিটি যুগোস্লাভিয়ার বিলুপ্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছিল, যেখানে প্রাক্তন প্রজাতন্ত্রের সীমানা আন্তর্জাতিক সীমান্তে পরিণত হয়েছিল । সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ইউক্রেনের প্রশাসনিক সীমানার মধ্যে ক্রিমিয়া এবং অন্যান্য বর্তমানে দখলকৃত অঞ্চলগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল । রাশিয়া একাধিক আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনের ১৯৯১ সালের সীমানা স্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে:  

  • বেলোভেজহা চুক্তি (১৯৯১) এবং আলমা-আটা প্রোটোকল (১৯৯১) যা সোভিয়েত ইউনিয়নকে বিলুপ্ত করে এবং কমনওয়েলথ অফ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস (CIS) গঠন করে, পক্ষগুলিকে একে অপরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং "বিদ্যমান সীমানার অলঙ্ঘনীয়তা"কে সম্মান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে  

  • কমনওয়েলথ চার্টার (১৯৯৩) ইউক্রেনের বিদ্যমান সীমান্তগুলিকে রাশিয়ার স্বীকৃতিকে আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়  

  • বুদাপেস্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তা স্মারকলিপি (১৯৯৪) ইউক্রেনের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং "বিদ্যমান সীমানা"কে সম্মান করার প্রতিশ্রুতি দেয়  

  • ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব চুক্তি (১৯৯৭), একটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তি, উভয় পক্ষকে "একে অপরের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করতে এবং তাদের সাধারণ সীমানার অলঙ্ঘনীয়তা নিশ্চিত করতে" প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে । এই চুক্তিটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল  

C. দখলকৃত অঞ্চলে গণভোটের অবৈধতা

ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসনে ২০১৪ এবং ২০২২ সালের গণভোটের উপর ভিত্তি করে রাশিয়ার দাবিগুলি আইনগতভাবে অবৈধ । আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, আত্মনিয়ন্ত্রণের উপর গণভোট অবশ্যই স্বাধীন ও ন্যায্য পরিস্থিতিতে, বাহ্যিক জবরদস্তি বা সামরিক দখল ছাড়াই পরিচালিত হতে হবে । ভেনিস কমিশন ২০১৪ সালের ক্রিমিয়ান গণভোটকে অসাংবিধানিক এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করে পরিচালিত বলে দেখতে পায় । ২০২২ সালের গণভোটের প্রতিবেদনগুলি ব্যাপক জবরদস্তি এবং সামরিক ভীতি প্রদর্শন দেখায়  

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গণভোটগুলির অবৈধতা নিশ্চিত করেছে: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৮/২৬২ প্রস্তাবনা ক্রিমিয়ান গণভোটকে অবৈধ ঘোষণা করেছে, এবং ES-১১/৪ প্রস্তাবনা ২০২২ সালের গণভোটগুলিকে ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা পরিবর্তন করার অবৈধ প্রচেষ্টা হিসাবে নিন্দা করেছে । আত্মনিয়ন্ত্রণের নীতি প্রাথমিকভাবে অভ্যন্তরীণ আত্মনিয়ন্ত্রণের উপর (একটি রাষ্ট্রের মধ্যে বিকাশের অধিকার) মনোযোগ দেয়, যখন বাহ্যিক আত্মনিয়ন্ত্রণ (বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার) ব্যাপকভাবে বিতর্কিত । এমনকি যদি প্রতিকারমূলক বিচ্ছিন্নতা একটি প্রতিষ্ঠিত আইনি নিয়ম হতো, তাহলেও ক্রিমিয়া বা অন্যান্য দখলকৃত অঞ্চলের জনগণ রাশিয়ার হস্তক্ষেপের আগে এটিকে ন্যায্যতা দিতে পারে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল তার কোনো প্রমাণ নেই  

রাশিয়া কর্তৃক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি (বুদাপেস্ট স্মারকলিপি, CIS প্রোটোকল, ১৯৯৭ সালের চুক্তি) এবং আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিগুলির (আঞ্চলিক অখণ্ডতা, শক্তি প্রয়োগ না করা) প্রতি তার প্রতিশ্রুতিগুলির সুস্পষ্ট অবজ্ঞা একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করে। যদি এই ধরনের লঙ্ঘনগুলি চলতে দেওয়া হয়, তবে এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তার মূল ভিত্তিকেই ক্ষুণ্ন করে। এটি অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিকে আঞ্চলিক দাবি বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে উৎসাহিত করতে পারে, যা বৃহত্তর বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভাঙ্গনের দিকে নিয়ে যাবে। সুতরাং, ইউক্রেনের সংঘাত কেবল ইউক্রেন সম্পর্কে নয়; এটি আন্তর্জাতিক আইনের ভবিষ্যৎ এবং রাষ্ট্রীয় আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী নীতিগুলি সম্পর্কে।  

উপসংহার

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একটি অত্যন্ত জটিল সংঘাত, যার শিকড় শতাব্দীব্যাপী আন্তঃসম্পর্কিত অথচ প্রায়শই বিতর্কিত ইতিহাসে নিহিত। এর কারণগুলি বহুস্তরীয়, যার মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক অভিযোগ, ভিন্ন জাতীয় আকাঙ্ক্ষা, রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং আন্তর্জাতিক আইনি নীতিগুলির উপর একটি মৌলিক সংঘাত। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য এবং ইউক্রেনীয় পরিচয়ের দমনের দীর্ঘ ইতিহাস থেকে শুরু করে ইউক্রেনের সোভিয়েত-পরবর্তী পশ্চিমা একীকরণের প্রচেষ্টা পর্যন্ত, সংঘাতের বীজ প্রজন্ম ধরে বপন করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের মূল ঘটনাগুলি - ইউরোমাইদান বিপ্লব, রাশিয়ার ক্রিমিয়া অবৈধ সংযুক্তি এবং ডনবাসে যুদ্ধের সূত্রপাত - একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ চিহ্নিত করে, যা সুপ্ত উত্তেজনাকে প্রকাশ্য শত্রুতাতে রূপান্তরিত করে।

২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ, "নিরস্ত্রীকরণ," "নব্য-নাৎসি মুক্তকরণ" এবং "গণহত্যা" এর ভিত্তিহীন দাবি দ্বারা ন্যায্যকৃত, এই কারণগুলির চূড়ান্ত পরিণতিকে প্রতিনিধিত্ব করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যানকৃত এই অজুহাতগুলি রাশিয়ার অন্তর্নিহিত প্রতিশোধমূলক মতাদর্শ এবং ইউক্রেনের সার্বভৌম অস্তিত্ব ও তার নিজস্ব পথ বেছে নেওয়ার অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করার উপর জোর দেয়। সমালোচনামূলকভাবে, রাশিয়ার পদক্ষেপগুলি মৌলিক আন্তর্জাতিক আইনি নীতিগুলি, যার মধ্যে আঞ্চলিক অখণ্ডতা, শক্তি প্রয়োগের নিষেধাজ্ঞা এবং এটি পূর্বে স্বাক্ষরিত অসংখ্য দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তিগুলি অন্তর্ভুক্ত, সেগুলির স্পষ্ট লঙ্ঘন। অতএব, সংঘাতটি কেবল একটি আঞ্চলিক বিরোধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিয়ম-ভিত্তিক ব্যবস্থার প্রতি একটি গভীর চ্যালেঞ্জ, যার বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও আত্মনিয়ন্ত্রণের নীতিগুলির জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। এই ঐতিহাসিক, ভূ-রাজনৈতিক এবং আইনি কারণগুলির দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতি ইঙ্গিত দেয় যে একটি স্থায়ী সমাধানের পথ এখনও উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ।

Post a Comment

4 Comments

  1. রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে বিরোধ জটিল এবং ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে নিহিত। যুদ্ধের কারণ সম্পর্কে উভয় দেশের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে সমর্থন করার দাবি করে যখন ইউক্রেন রাশিয়াকে অবৈধ সংযুক্তি এবং আগ্রাসনের জন্য অভিযুক্ত করে।

    ReplyDelete
  2. রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

    ReplyDelete
  3. রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার দিকে কাজ করা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে পরিস্থিতি কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া জড়িত সকল পক্ষের জন্য অপরিহার্য। শুধুমাত্র কূটনীতি, সংলাপ এবং সহযোগিতার মাধ্যমেই সংঘাতের অবসান ঘটাতে এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি স্থায়ী সমাধান পাওয়া যেতে পারে।

    ReplyDelete
  4. ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয়, তবে সংঘাতটি রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির দুর্বলতা তুলে ধরেছে। প্রতিবেশী দেশগুলিতে রাশিয়ার আরও সম্প্রসারণের সম্ভাবনা ন্যাটো সদস্যদের মধ্যে বিপদের ঘণ্টা বাড়িয়েছে, যার ফলে এই অঞ্চলে সামরিক মহড়া এবং মোতায়েন বৃদ্ধি পেয়েছে।

    ReplyDelete

এখানে প্রকাশিত সংবাদ গুলো ইন্টারনেট, আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক এবং বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। কারো অধিকার এবং আত্মসম্মান কে ক্ষুন্ন করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।